বাংলাদেশ ও বিশ্বদরবারে প্রশংসায় ভাসছেন নান্দাইলের মেয়ে সানজিদা। তাঁর পুরো নাম মোছা. সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নে। ঝাউগড়া গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া সোহেল ও লিজা আক্তার দম্পতির মেয়ে।
বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। শৈশব থেকে কাল থেকেই সানজিদা ছিলেন একজন প্রতিবাদী মেয়ে। সততা ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা ছিল তাঁর জীবন সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাধ্যমিকে পড়াশুনা করার পাশাপাশি সহপাঠীদের নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তিনি কাজ করে চলেছেন।
অবশেষে এ প্রতিবাদী চরিত্র আর সামাজিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে সানজিদা ইসলাম উঠে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
সম্প্রতিকালে বিবিসি’র প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১শ’ নারীর তালিকায় উঠে এসেছে সানজিদার নাম। প্রায় ৭০টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে বিবিসি’র তালিকায় সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার স্থান ২১তম। যেখানে তালিকায় তার আগের নামটি হচ্ছে ভারতের বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া।
ইব্রাহিমি, আফগানিস্তানের শিক্ষার্থী ফাতিমা আমিরি, মিয়ানমারের চিকিৎসক আই নাইন তো, রাশিয়ার সাংবাদিক তাইসিয়া বেকবোলাটোভাসহ আরও কৃতি নারীর নাম। জানা গেছে, সানজিদা ইসলাম সহপাঠীদের নিয়ে ‘ঘাস ফড়িং’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন তৈরী করে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ঝাপিঁয়ে পড়তেন। প্রশাসনও তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছে। সানিজদা ইসলামের এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডের খবর ঢাকার জাতীয় পত্র-পত্রিকা সহ বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে উঠে আসে। এক পর্যায়ে বিবিসি যাচাই-বাছাই করে প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১শ’ নারীর
তালিকায় তার নাম ২১তম অবস্থানে স্থান দেয় ।
এ বিষয়ে সানাজিদা ইসলাম ছোঁয়া সংবাদ মাধ্যম কে জানান, গত ৬ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার সকালে একটি নম্বর থেকে বিবিসির পরিচয় দিয়ে বলা হয়, আমি বিশ্বের ১শ’ জন প্রেরণা দায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় আছি। এ খবর শুনে অবাক হয়ে যাই। প্রথমে বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি। এরপর আমার মোবাইল ফোনে একটি লিংক পাঠানো হয়। এটা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। আমার নামের আগে আছে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়ার নাম। এটা অবিশ্বাস্য। সানজিদা আরও জানান, তাঁর মা লিজা আক্তারের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। বাল্যবিবাহের কুফল তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর সহপাঠীরা
মাঝে মধ্যে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছেন দেখে নিজেই সহপাঠীদের নিয়ে গঠন করেন ঘাস ফড়িং সংগঠন। অনেক সময় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকরাও তাদেরকে সহযোগীতা করেছেন। এতে অনেক সময় হুমকি-ধমকির মধ্যেও থাকতে হয়েছে। কারণ একটি বাল্যবিবাহ বন্ধের পর অনেকেই এটাকে ভালো চোখে দেখে না। এরপরও সানজিদা তার কাজ চালিয়ে গেছেন। এই সফলতার জন্য ঘাসফড়িং টিমের ৭জনসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সানজিদা।