নিজস্ব প্রতিবেদক: আনিসুর রহমান সোহাগ, এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব স্কুল এবং মালিকদের একজন। দীর্ঘ এক দশক ধরে শিক্ষা খাতে কাজ করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক শিক্ষামূলক কাঠামো, যেমন কেমব্রিজ এবং অন্যান্য কোয়ালিফিকেশনের ওপর তার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা ইউসিএল, এলএসই, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, ওয়েস্ট সিডনি ইউনিভার্সিটি, আইআইইউএম মালয়েশিয়া, ইউটিএম মালয়েশিয়া এবং এমনকি বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এই সাফল্য প্রমাণ করে যে তিনি কিভাবে একটি মানসম্পন্ন ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার ব্যবস্থা পরিচালনা করেছেন।
সোহাগের নেতৃত্বে এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে ইসলামিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে তৈরি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন শাখায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষিত করছে। এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিশেষত্ব হলো, তারা আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায়ও অগ্রগামী। হিফজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এখানে শিক্ষার্থীদের কুরআন মুখস্থ করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং ইতিমধ্যে ৬২ জন হাফেজ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও আচরণিক উন্নয়নের জন্য নিয়মিত তারবিয়াহ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
স্কুলটির শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ক্ষেত্রে যেমন সফল, তেমনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও অসাধারণ ফলাফল করছে। স্কুলটি ২০১৮ সালে ‘বেস্ট প্রি-স্কুল অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার অর্জন করে এবং দুবাইয়ে ‘বেস্ট স্কুল চেইন অফ দ্য ইয়ার’ শিরোপা লাভ করে। এমনকি, অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে একমাত্র এভেরোজকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যেখানে তাদের শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভর্তির সুযোগ পায়।
আনিসুর রহমান সোহাগের শিক্ষা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে একটি আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে তিনি ২০২১ সালে এন্ট্রাপ্রেনরশিপ ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন, যেখানে তার সিজিপিএ ছিল ৩.৯৪। এর আগে, তিনি ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার পুত্রা বিজনেস স্কুলে পিএইচডি করছেন, যা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার অধীনে পরিচালিত।
আনিসুর রহমান সোহাগ বিশ্বাস করেন, শিক্ষা সংস্কারের জন্য একটি নির্দিষ্ট মডেল, কাঠামো এবং পাঠ্যক্রম প্রয়োজন, যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি জানান, তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দিতে হবে—তারা যেন দেশের শিক্ষার কাঠামো পর্যবেক্ষণ করতে পারে, তাদের মতামত দিতে পারে এবং সংস্কারের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের জাতির ভবিষ্যত এবং এদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাদের সঠিক সুযোগ, শিক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা দেওয়া হলে, তারা দেশের উন্নয়নের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে।”
শিক্ষার সাথে আধ্যাত্মিকতা এবং নৈতিক শিক্ষা যুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “যে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধ্যাত্মিকতা বা নৈতিক মূল্যবোধ থাকে না, তা শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণভাবে গড়ে তুলতে পারে না। আমরা দেখেছি, যে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিক শিক্ষা অনুপস্থিত, সেখানেই নানা নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। সোহাগ বিশ্বাস করেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আধ্যাত্মিকতা, নৈতিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় হওয়া উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠতে পারে। এভাবেই একটি পূর্ণাঙ্গ জাতি গঠন করা সম্ভব।
আনিসুর রহমান সোহাগ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা উল্লেখ করে বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা কেবল পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করবে না, বরং বাস্তব জীবনে সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে। আমাদের পাঠ্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে, যেমনটি আমরা ইউকে, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব বা কাতারের মতো দেশগুলোতে দেখি। এসব দেশ দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তুলছে, যা আমাদের জন্যও অনুসরণীয় হতে পারে।” আনিসুর রহমান সোহাগকে জুলাই বিপ্লব, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং ব্যবসায়ী ও শিক্ষাবিদদের ভূমিকার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে উঠেছে জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন। নতুন প্রজন্মের সাহসী ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে, তা শুধু বর্তমানের নয়, ভবিষ্যতের নেতৃত্বকে অনুপ্রাণিত করবে। এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে, তরুণ প্রজন্মের শক্তি ও অঙ্গীকার দেশের উন্নয়নের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রজন্মকে সমর্থন করলে তারা ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।
আনিসুর রহমান সোহাগ বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেছেন শুরু থেকেই। তিনি গত ১৮ জুলাই তার ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টের মাধ্যমে সাহসী ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার বার্তা দেন:
“বাংলাদেশের সাহসী ছাত্রছাত্রীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি 🇧🇩 আজ আমি বাংলাদেশের সেই সাহসী ছাত্রছাত্রীদের অটুট সমর্থন জানাচ্ছি, যারা অন্যায্য কোটার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তোমরা যে দৃঢ়তা, সাহস এবং ঐক্য প্রদর্শন করেছ, তা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার, এবং সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মেধা সর্বদা প্রধান হওয়া উচিত। তোমাদের আন্দোলন কেবল কোটার জন্য নয়; এটি ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার এবং আমাদের জাতির ভবিষ্যতের জন্য।”
এই স্ট্যাটাস তখন অনেকেই ভাল-ভাবে নেয়নি। তখন অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু এতগুলো মৃত্যু চোখের সামনে মেনে নিতে পারছিলাম না। এভেরোজে কাজ করার শুরু থেকেই অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। বিভিন্ন মহল আমার ও আমার স্কুলের ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে আমার ও আমার স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও অপকৌশল মোকাবেলা করে আল্লাহ আমাদের ঠিকিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ আমার স্কুল ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল রাখুন। আনিসুর রহমান সোহাগ বলেন, আমি দৃঢ় চিত্তে এই আশাবাদ ব্যক্ত করি যে তরুণ প্রজন্ম যেন সাহসের সাথে দেশের সংস্কার ও উন্নয়নে অংশ নিতে পারে এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার আনতে পারে।বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার এই প্রচেষ্টা আমাদের দেশকে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে আমাদের নতুনভাবে পরিচিত ও সম্মানিত করতে সহায়ক হবে।