মোঃ জিয়াউর রহমান স্টাফ রিপোর্টার:
কুষ্টিয়ায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা থেকে আসা দুজন কোভিড পজিটিভ রোগী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। করোনার বিস্তার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়ানোর মধ্যে কুষ্টিয়ার একমাত্র পিসিআর ল্যাবটির যন্ত্রপাতি চুরির খবর জনমনে ক্ষোভ তৈরি করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ২০ জনের বেশি নারী-পুরুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি নার্সরা তাঁদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মাহফুজুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহের আশঙ্কা না থাকলেও চিকিৎসা দিতে সবকিছু প্রস্তুত আছে।
আইসোলেশন ওয়ার্ডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা থেকে দুজন করোনা পজিটিভ রোগী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তা না করে চলে গেছেন। অবহেলায় এভাবে কোভিড ছড়িয়ে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তাই তিনি জ্বর-সর্দি বা হাঁচি-কাশি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
এদিকে কুষ্টিয়ার জেনারেল হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি এক মাস আগে টের পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একটি একতলা ছোট ভবনে পিসিআর ল্যাবের যাত্রা শুরু হয়। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর এক বছর আগে পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালসংশ্লিষ্ট দুজন কর্মচারীকে ল্যাব দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পিসিআর ল্যাবে চুরির ব্যাপারটি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। এটা এক দিনে হয়নি।
ধারণা করছি, গত চার মাস ধরে চুরির ঘটনা ঘটছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে বিষয়টি টের পেয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে।’ ল্যাব বন্ধের পর দেখভালের জন্য যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের চরম অবহেলা রয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে কুষ্টিয়ায় কোভিডে মারা গেছেন ৮৫৫ জন। আক্রান্ত হন ৪ হাজারের মতো। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান। এই মাসে জেলাটিতে ৩৪২ জন মারা যান। আগস্টের পর থেকে এই মৃত্যুর হার কমতে থাকে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন সংকটে হাসপাতালেই ঝড়েছে অনেক প্রাণ।