বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
২৪ ঘন্টায় লাইভ খবর পেতে চোখ রাখুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে

কোরবানির গোস্ত বন্টন,” ইন্সপেক্টর আনোয়ার গফরগাঁও থানা

Reporter Name / ১৮৩ Time View
Update : সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩, ৬:০৪ পূর্বাহ্ন

কুরবানির গোশতের সামাজিক বন্টন জায়েজ নেই

কোরবানির গোশতের বাধ্যতামূলক সামাজিক বন্টন জায়েজ নেই। দেখতে সুন্দর ও মানবিক মনে হলেই যায়েজ হয়ে যায় না। যায়েজের জন্য প্রয়োজন শরঈ দলীল। কুরবানির গোশত তিন ভাগ করা উত্তম ও মুস্তাহাব। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। প্রয়োজনে বণ্টনে কমবেশি করাতেও কোনো দোষ নেই (আল-মুগনী ১১/১০৮; মির‘আত ২/৩৬৯; ঐ, ৫/১২০ পৃঃ)।

বর্তমানে বিভিন্ন মহল্লায় প্রচলন আছে, কুরবানির গোশতের এক-তৃতীয়াংশ একস্থানে জমা করে মহল্লায় যারা কুরবানি করতে পারেনি তাদের তালিকা করে সুশৃংখলভাবে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। কাজটি দেখতে ভালো হলেও এটি জায়েজ নেই। কেননা এই প্রচলনের ফলে কারও দিতে মনে না চাইলেও তাকে সমাজের খাতিরে দিতে হয়। না দিলে সামাজিক চাপ ও বদনামের স্বীকার হতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষ সামাজিক ভাবে মনিটরিং করা হয়, কেহ একতৃতীয়াংশের কম দিলেন কি না।

এধরনের প্রচলন খাইরুল কুরুনে পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলমানে মাল তার সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয়। (মুসনাদে আহমদ : ১৫/২৯৩, রদ্দুল মুহতার : ৬/৪২৭, আলমগিরী/হিন্দিয়া : ৫/৩০০, হেদায়াহ : ৪/৪৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪)

বাধ্যতামূলক সামাজিক বন্টন ও বাস্তবতা-১

আমার একান্ত পরিচিত একটি গ্রামের আপন ৩ ভাই। তারা ঢাকায় ইমামতি করেন। ঈদের নামাজ পড়ানো এবং মাদরাসার বিভিন্ন দায়িত্বের কারণে তাদের কেউ ঈদের দিন গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারেন না। তাই ঈদের পরদিন তিন ভাই মিলে বাড়িতে গিয়ে কোরবানি করেন। তারা সামর্থের সর্বোচ্চ পরিমাণ কুরবানির গোশত সমাজের গরিবদের মাঝে নিজেদের পক্ষ থেকে বিতরণ করেন। এরপরেও সমাজের পক্ষ থেকে তাদের বিপক্ষে অপপ্রচার করা হয়েছে যে, “সমাজে গোস্ত দিতে হবে এই কারণে তারা ঈদের দিন কোরবানি করে না।”

পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ যেন তাদের গোস্ত গ্রহণ না করে এমন অলিখিত নোটিশ জারি করা হয়। এ বছর তারা মনের কষ্টে ঢাকায় কোরবানি দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা কি বাধ্যতামূলক নয়? এ বিষয়ে কি বিশ্লেষণ করা হবে?

বাধ্যতামূলক সামাজিক বন্টন ও বাস্তবতা-২

তারা আপন দুই ভাই। একজন কোরবানি দিয়েছেন সাত ভাগের এক ভাগ। এর মধ্যে তিন ভাগের একভাগ সমাজের লোকজন এসে নিয়ে গেছেন। এরপর দেখা গেল যে ভাই কোরবানি দেন নাই- তিনি সমাজ থেকে যে পরিমাণ গোস্ত পেয়েছেন তার চেয়ে কোরবানি দাতার গোশতের পরিমাণ কম। অথচ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। আত্মীয় মেহমানের জন্য তার আরো বেশি গোশতের প্রয়োজন।

এমন পরিস্থিতিতে এই লোকের কাছ থেকে সমাজের লোক পাঠিয়ে বাধ্যতামূলক তিনভাগের এক ভাগ নিয়ে যাওয়াটা কতটুকু স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হতে পারে?

বাধ্যতামূলক সামাজিক বন্টন ও বাস্তবতা-৩

সামাজিকভাবে গোস্ত বন্টন করা হয় এমন একটি গ্রামে সরেজমিনে নিরীক্ষা করে দেখা গেছে- কোরবানি দাতাদের প্রত্যেকটি গরুর সাথে সমাজের পক্ষ থেকে এক একজন লোক দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়, যেন গোস্ত কম দিল কিনা সেটা যাচাই করতে পারে এবং একতৃতীয়াংশ গোস্ত নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া কোন কারনে কেউ যদি এক তৃতীয়াংশের কম গোস্ত প্রদান করে তাহলে তা নিয়ে সমালোচনা করা হয় এবং কোরবানি দাতাকে বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। কাউকে এমনও বলতে শোনা যায়- তিনি গোস্ত কেন দিয়েছেন? সবটা নিজেই খেয়ে ফেলুক, তার গোস্তের দরকার নাই। গোটা সমাজে এটা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে কি বলা যায় ঐচ্ছিক প্রদান করছে। এটা কি বাধ্যতামূলক সামাজিক বন্টন নয়?

বিকল্প প্রস্তাব-

ছোট পরিসরে এলাকাভিত্তিক বাড়ি, পাড়া অথবা মহল্লা ভাগ করে স্বেচ্ছাসেবী কিছু সংখ্যক দায়িত্বশীল পূর্ব নির্ধারিত স্থানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকবেন। যারা স্বেচ্ছায় গোস্ত প্রদান করতে চান তারা গোস্ত প্রদান করবেন।

কে কম দিল? কে বেশি দিল? এমন কোন বিষয় মনিটরিং করা হবে না। কে দিল কে দিল না? তা নিয়েও কোন ধরনের আলোচনা সমালোচনা করা হবে না।

এরপর নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ গোস্ত জমা হবে তা নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রকৃত গরিব লোকজনের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। কোন প্রভাব প্রতিপত্তি প্রদর্শন করা হবে না। কোন প্রকারের জবরদস্তি মূলক কর্মসূচি এবং অলিখিত বাধ্যতামূলক নিয়ম কানুন করা হবে না।

এভাবে যদি প্রকৃত গরিবদের মাঝে গোশত বন্টন করা হয় তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই। এ নিয়ম কোরবানি দাতা এবং গোস্ত গ্রহণকারী প্রকৃত গরিবদের জন্য কল্যাণকর হতে পারে।

লেখক : মুফতি ওযায়ের আমীন .
কপি সংগৃহীত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Developer Ruhul Amin