ঈদ পুনর্মিলনী উপলক্ষে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। এ আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝেও ছিল উৎসবের আমেজ। লাঠিখেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেলে উপজেলার ঝাওয়াইল খেলার মাঠে এ লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলাটির আয়োজন করে ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বসে গ্রামীণ মেলা।
লাঠিখেলা দেখতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, একসময় লাঠিখেলা ছিল মানুষের কাছে জনপ্রিয়। গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র উৎস ছিল এ লাঠিখেলা। ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি বৈশাখী মেলা, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন এই খেলা আর দেখা যায় না। অনেক দিন পর সেই ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা দেখতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। প্রথমবারের মতো এ খেলা দেখতে এসে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বাপ্পি হোসেন বলেন, এ ধরনের খেলা আগে আমি কখনো দেখেনি। লাঠি নিয়ে একে ওপরের লাঠির ওপর মারছে খুব ভালো লাগছে।
লাঠিয়াল নেতা শহিদ আলী মিয়া বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ ও বিনোদন জোগাতে আমরা লাঠিখেলা দেখাই। ১০-১৫ বছর ধরে এ লাঠিখেলা দেখিয়ে আসছি। তাদের আনন্দে আমরাও আনন্দিত হই। আরেক লাঠিয়াল স্বপন আলী বলেন, এটা শুধু খেলা নয়। এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার কৌশলও শেখা যায়। অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হলে, খালি হাতেও বেঁচে আসা সম্ভব। তা ছাড়াও শারীরিক কসরতে এ খেলাটি একটি অন্যতম ব্যায়াম।
ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ওরফে ঠাণ্ডু বলেন, গ্রামীণ খেলাধুলা কমে যাওয়ায় যুব সমাজ মাদকের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। তাই যুব সমাজকে মাদকের পথ থেকে দূরে রাখতে এ ধরনের আয়োজন করা প্রয়োজন। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই প্রতি বছরই এ ধরনের আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতি বছর আমরা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য এ লাঠিখেলার আয়োজন করেছি। এ লাঠিখেলা দেখতে আমাদের এলাকা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় হাজারো মানুষ আসে। আমরা এ লাঠিখেলার আয়োজন প্রতি বছর করব।
লাঠিখেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ওরফে ঠাণ্ডু। ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রকিবুল হক ছানা, সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা লাকী, গোপালপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম আক্তার মুক্তা, ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।