মোঃ হুমায়ুন কবির,গৌরীপুর প্রতিনিধি:
প্রায় এক বছর আগে মাটি কেটে শুরু হয়েছিল গৌরীপুর উপজেলার মাওহা থেকে মৈশহাটি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পাকা রাস্তার নির্মাণকাজ। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় এবং বৃষ্টির পানিতে রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতি এবং অর্থসংকটের কারণে রাস্তার নির্মাণকাজ থেমে আছে। মাটি কাটার পর কিছু অংশে কাদাযুক্ত বালু ফেলে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। চলতি বর্ষায় এই রাস্তা এখন পরিণত হয়েছে কাদার রাজ্যে, যেখানে যানবাহন তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও চলাচল করা দায়।
কৃষকেরা বিপাকে:
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. রতন বলেন, “প্রায় এক বছর আগে রাস্তার মাটি কেটে অর্ধেক কাজ করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন বৃষ্টিতে পুরো রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।”
অন্যদিকে স্থানীয় কৃষক মো. কুরশেদ আলী জানান, “ধান কেটে মাঠেই ফেলে রাখতে হচ্ছে, কারণ রাস্তা দিয়ে কেউ ধান কিনতে আসতে চায় না। রাস্তায় হাঁটু পানি, কেউ আসবে কী করে? জরুরি প্রয়োজনে রোগী নিয়েও বের হওয়া সম্ভব না।”
ঠিকাদারের নানা অজুহাত:
নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর এলাকার ঠিকাদার মো. সারোয়ার জাহান কাজটি পান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এমআরআইডিপি প্রকল্পের অধীনে। কাজ শুরু হয় ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে, শেষ হওয়ার কথা ছিল ২ জানুয়ারি ২০২৫ সালের মধ্যে। কিন্তু সময়ের অর্ধেক পার হতেই কাজ থেমে যায়।
ঠিকাদার সারোয়ার জাহান বিষয়টি নিয়ে তিন ধরনের ব্যাখ্যা দেন। প্রথমে তিনি বলেন, “যে সাব-কন্ট্রাক্টর কাজটি নিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে মামলার কারণে কাজ বন্ধ হয়েছে।” পরে জানান, “মালামাল সংকট রয়েছে।” সর্বশেষ তিনি অর্থসংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, “টাকা নেই, তাই কাজ করাতে পারছি না।”
প্রকৌশল বিভাগের অবস্থান:
গৌরীপুর উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব বলেন, “ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।”
জনগণের দাবি:
স্থানীয়রা দ্রুত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করে যোগাযোগব্যবস্থা সচল করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এটি শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি হচ্ছে গৌরীপুর ও নেত্রকোনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, যার ওপর নির্ভর করে হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকা।