বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
২৪ ঘন্টায় লাইভ খবর পেতে চোখ রাখুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান

Reporter Name / ৬৪ Time View
Update : শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩, ৮:১৯ পূর্বাহ্ন

 

ইসলাম ডেস্ক
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনের মাস রমজান। বরকতময় রমজানে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রোজাগুলো যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকেন। কিন্তু রোজা পালনের মূল উদ্দেশ্য কী? কোরআনের ভাষায় তা সুস্পষ্ট। তাকওয়া অর্জনই রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল। আশা করা যায়, তোমরা আল্লাহভীতি বা পরহেজগারী অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনে প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে সংযত করে চলার বিকল্প নেই। পবিত্র রমজানে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য হেদায়েত গ্রন্থ কোরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। আর যারা এ মাসটি পাবে তাদের জন্য রোজাকে আবশ্যক করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
‘রমজান সেই মাস; যে মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যে কুরআন মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক। আর তাতে রয়েছে সুস্পষ্ট হেদায়েত। যা হক ও বাতিলের পার্থকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পবে তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। আর যে (এ মাসে) অসুস্থ কিংবা মুসাফির হবে সে অন্য সময় এ সংখ্যা (রমজানের রোজা) পূর্ণ করে নেবে। তোমাদের জন্য যা সহজ আল্লাহ তাই করেন। আর যা তোমাদের জন্য কঠিন তা তিনি করার ইচ্ছা করেন না। যেন তোমরা নির্ধারিত (রমজান মাসের) সময়টি সম্পূর্ণ করতে পার এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, কেননা আল্লাহ তোমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যাতে তোমরা তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

হক ও বাতিলের সুস্পষ্টকারী কোরআন মানুষের মুক্তির জন্য এ রমজান মাসেই নাজিল করা হয়েছে। এ আয়াতে শর্ত করা হয়েছে যারা এ মাসটি পাবে তাদের অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। তাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ। আবার মুসাফির কিংবা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা যেন কষ্টকর না হয় সে বিষয়টিও সুস্পষ্ট করা হয়েছে এ আয়াতে। আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমে তিনি বান্দাকে সঠিক দেখাবেন।

যারা আল্লাহর বিধান পালন করতে গিয়ে রোজা রাখবে, তারাই হবে তাকওয়াবান। এছাড়াও কুরআন-হাদিসে রোজা পালনের অনেক উপকারিতা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু রোজা কীভাবে মানুষকে তাকওয়াবান করে তুলবে? হ্যাঁ, রমজান মাসের রোজা রাখার মাধ্যমেই মানুষের অন্তরে তৈরি হবে আল্লাহর ভয়। আর এ ভয়ই মানুষকে সঠিক পথের দিকে নিয়ে যাবে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আশা করা যায়, (রোজা রাখলে) তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে।’

তবে রোজাদারের জন্য দিকনির্দেশনা হলো-
দিনের বেলায় যেমন হালাল বস্তু পানাহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তেমনি বৈধ স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা থেকেও বিরত থাকতে হবে। এমনকি রোজাদার যখন রমজান মাসে ইতেকাফ পালন করবে তখনও স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করতে পারবে না। যারা আল্লাহকে ভয় করে দিনের বেলা উল্লেখিত হালাল কাজগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সক্ষম হবে, নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে।

এ নির্দেশনার মানে এই নয় যে, সে রমজানে খাবার খেতে পারবে না এবং স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারবে না। বরং তা রমজানেও বৈধ। সে বিষয়টিও আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এভাবে সুস্পষ্ট করেছেন-
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُواْ مَا كَتَبَ اللّهُ لَكُمْ وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্মপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। এরপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। এরপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭) এ নির্দেশনার হেকমত হলো- যারা আল্লাহর হুকুম মেনে হালাল কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে, নিঃসন্দেহে তারা দুনিয়ার সব হারাম কাজ থেকেও নিজেদের বিরত রাখতে সক্ষম হবে।

রমজান মাসের রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা মানুষকে শয়তানের সব প্ররোচনা থেকে মুক্তি দেয়। যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে। রোজা রাখার ফলে গরিব-দুঃখি মানুষের না খাওয়ার কষ্ট বুঝতে সক্ষম হয় রোজাদার। তাদের প্রতি রোজাদারের হৃদয় ও মন আকৃষ্ট হয়। তাদের ক্ষুধার কষ্ট লাগবে রোজাদারের দান-খয়রাত করার মানসিকতা তৈরি হয়।

কষ্টের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া শুধু মুখে শুনে কিংবা বই পড়ে কোনো মানুষই কষ্টের পরিপূর্ণ বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারে না। মানুষ যখন কষ্টের মুখোমুখি হয় তখনই কেবল বাস্তব কষ্ট কেমন তা বুঝতে সক্ষম হয়।

রমজান মাসের রোজা মানুষের ক্ষুধার কষ্ট উপলব্দির মাধ্যম। রোজা রেখে উপোস থাকার মাধ্যমেই ক্ষুধার্ত মানুষের প্রকৃত কষ্ট উপলব্ধি করা সম্ভব হয়। আর তাতে রোজা প্রকৃত শিক্ষাও মানুষের সামনে ফুটে ওঠে। মানুষ হয়ে ওঠে পরহেজগার বা তাকওয়াবান।

রোজার অন্যতম শিক্ষা
সময়ের যথাযথ ব্যবহার শেখায় রোজা। রমজানের প্রতিটি ইবাদতই সময়ের সঙ্গে জড়িত। যার ফলে মানুষ নিয়ম-শৃঙ্খলায় অভ্যস্ত হয়। রোজা মানুষের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশ পালনের মানসিকতা তৈরি করে দেয়। নফসের দাসত্ব ও পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, তারা দুনিয়ার ধনি-গরিব সব মানুষের প্রতি সদয় থাকে।
রমজান ঐক্যের শিক্ষা দেয়। ধৈর্যের শিক্ষা দেয। দুনিয়ার সব মানুষকে এক কাতারে সামিল করে দেয় রমজান। ধনি-গরিব কিংবা আমির-ফকিরে কোনো বৈষম্য থাকে না। কেননা ইফতার-সেহরি গ্রহণে কেউই নিজেদের মধ্যে উঁচু-নিচু ভাব নেয় না। করে না সময়ের ব্যবধান।
রমজান মানুষকে মসজিদমুখী করে গড়ে তোলে। মসজিদ হয়ে ওঠে রোজাদারের আত্মার আস্তানা। হৃদয়ে কাবা। আর মসজিদমুখী পরিবেশের কারণে রোজাদারের মন্দ কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে না বললেই চলে।
আল্লাহর নির্দেশ পালনে একনিষ্ঠ হয় রোজাদার। আর এভাবেই মানুষ মন্দ কাজ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর ভয় অর্জনে উদ্বুদ্ধ হয়।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে কোরআনের ঘোষণা তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া পরকালের যাবতীয় নেয়ামতে জীবন পরিপূর্ণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Developer Ruhul Amin