প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ১, ২০২৫, ৪:৪৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অগাস্ট ৩১, ২০২৩, ১:৩৪ পি.এম
দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিস ঘুষ, দুর্নীতি ও দালালদের যেন স্বর্গরাজ্য

মোঃ জিয়াউর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিস যেন ঘুষ দুর্নীতি ও দালালদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এখানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। দালাল না ধরলে নড়ে না কোন ফাইল। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মূল্য তালিকা সম্বলিত সাইনবোর্ডথাকলেও তা’ কেবল লোক দেখানো মাত্র। সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিসের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্যের হালচিত্র। অসাধু কধু র্মকর্তা কর্মচারি পরিবেষ্টিত ভূমি অফিসে দালালদের কাছে কোন কাজই অসাধ্য নয়। বৈধ কাগজপত্র থাকা স্বত্বেও ঘুষের রেটে হেরফের হলে প্রকৃত ভূমি মালিকদের হতে হয় চরম হয়রানির শিকার। জমির নামজারি কেস জমা দিতে লাগে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। নামজারি করতে সরকার- নির্ধারিত ফি যেখানে ১ হাজার ১৫০ টাকা। সেখানে ভুক্তভোগীদের গুনতে হয় হাজারো টাকা।ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা খুঁজ তে পরিচয় গোপন রেখে গ্রাহক সেজে এক দালালের কাছে নামজারি করার কথা বলতে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কাগজপত্র সঠিক থাকলে ‘খাজনাসহ ৮,০০০/= টাকায় নামজারি পর্চা করে দিতে পারবেন। খাজনা পরিশোধ রয়েছে এমন কথা জানালে দালাল বলেন তা’ হলে ৫,০০০/= টাকা লাগবে। দালাল আরো বলেন, কাগজপত্র ঠিক না থাকলে অফিসকেই দিতে হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সে কারনে কাগজপত্র ঠিক না থাকা নামজারি কেস ১৫ হাজার টাকার নিচে হাতে নেয় না বলে জনায় ওই দালাল।দালাল-কর্মচারী সবাই মিলে দৌলতপুর ভূমি অফিসে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। ফলে দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। দালাল-কর্মচারীর নেই কোন লুকো লু চুরি, লাখ-লজ্জা ও ভয়ভীতি। এমনভাবে ঘুষের দরদাম চলে, এ যেন বাজারের গরু ছাগলের বেচা- কেনা চলছে। দাবিমত টাকা দিলে ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজ হয় নিমেষেই। অনিয়মের বেড়াজালে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নামজারি শুনানীর দিনে নির্ধারিত লোকের অনুপস্থিতিতে দালাল কিংবা কর্মচারীরা করে দেয় খারিজসহ সব ধরনের কাজ। এই অফিসের দূর্নীতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত পরিচিত হয়ে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ভূক্তভোগীরা। দলিলপত্র ঠিক থাকলে টাকার পরিমাণ কম রাখা হয়। একটু এদিক-সেদিক হলে আর রক্ষা নেই, হাজার হাজার টাকা ঢেলেও নিস্তার মেলে না। এমনকি ‘র’ এর কাছে ‘ব’ মানে নিচে বিন্দু না পড়লে টাকার অংক বেড়ে যায় কয়েক হাজার।সূত্রমতে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিসসহ ১৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রায় দুই শতাধিক দালাল সক্রিয় রয়েছে। তাদের হাত দিয়েই নামজারি কেস একসাথে জমা করে প্যাকেজ হিসেবে জমির মালিক ছাড়াই জমা দেয় খারিজ করার জন্য। এই সব দালাল ও অসাধু কর্মচারীরা নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে উপজেলা ভূমি অফিসসহ সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজকর্ম। যারা টাকার বিনিময়ে নামজারী আবেদন করে তাদের নামজারি কেসের রিপোর্ট হয়ে যায় কোন বাঁধা ছাড়া।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন ভূক্তভোগী বলেন, ভূমি অফিসের দেয়ালও যেন ঘুষ চাই। এই অফিসের কর্মচারীরা দিনে কত টাকা যে ঘুষ নেয় তা একমাত্র আল্লাহ্-ই জানেন। ভূমি অফিসের ঘুষ দুর্নীতির বিষয় সকলেরই জানা, তার পরও কোন প্রতিকার নেই। প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের এমন দৃশ্য দৃ দেখলে মনে হবে এ যেন সর্ষের মধ্যে ভূত। অফিসের সিসি ক্যামেরাগুলো সুবিধাজনকভাবে বসানো থাকে।
কয়েকটি কক্ষে অকেজো করে অথবা ক্যামেরার মূখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখা হয় যাতে ঘুষ লেন-দেনের কোন ডকুমেন্ট ক্যামেরায় না আসে।সরেজমিনে দৌলতপুর ভুমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নামজারি কেস জমা নেওয়ার সময় ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে অফিস সহায়ক মনোয়ার হোসেন মিন্টু এবং প্যাকেজ খারিজ করে দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে টাকা ঘুষ নিচ্ছে সার্ভেয়া আহসানুজ্জামান। তাদের দুই’জনকে কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারেননি তারা। এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিদুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘুষ নেওয়ার মত কোন কিছু হয়না আমার অফিসে, যদি প্রমান হয় আমি ব্যবস্থা নেবো বলে জানান। সেসময় তিনি সংবাদিকের করা ঘুষ নেওয়ার ভিডিও কিংবা ছবি থাকলে তাকে দিতে বলেন তিনি। তবে এর পূর্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য কম পক্ষে পনের বার ফোন করেছিলেন এই প্রতিবেদক।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মাজহারুল হক
Email: news.pratidinerbangladesh@gmail.com
ফোনঃ 01752-388928
প্রধান কার্যালয়ঃ লেভেল ১৫/এ, ১২ সোনারতরী টাওয়ার, বাংলামোটর, ঢাকা।
Copyright © 2025 প্রতিদিনের বাংলাদেশ. All rights reserved.