প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ১০:০৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৪, ৩:৫৭ পি.এম
পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য ও আমাদের করণীয়

মুসলমানদের যে কয়টা স্পেশাল গুরত্বপূর্ণ দিন রয়েছে তার মাঝে সবে বরাত অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যময় রজনী। এ রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন।এ-ই দিন কে নিয়ে একশ্রেণীর মানুষ একদম মানতে রাজি না? তারা এ-ই দিন টাকে একবারেই গুরুত্ব দেয়না। আবার আরেক শ্রেণীর মানুষ এ-ই দিন অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকে। এ নিয়ে নানা মত ও পথ রয়েছে। এটা নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি যেমন কাম্য না তেমনি একদম গুরুত্বহীন মনে করে এড়িয়ে চলাও কাম্য না।আমাদের আদর্শিক জায়গায় মজবুতির সাথে আঁকড়ে থেকে ঈমানের ভিত্তি শক্তিশালী করা এটাই ঈমানের দাবী। আল্লাহর রাসুল (সাঃ)বলেছেন আমি দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি যে তা আঁকড়িয়ে ধরে রাখবে সে কখনও বিপদগামী হবেনা একঃ আল্লাহর কিতাব দুইঃ আমার সুন্নত, সুতরাং এ-র বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। সবে বরাত নিঃসন্দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত চলেন দেখি এ রাত বিষয়ে কি পাওয়া যায়। এ রাতে অনেক পাপী বান্দাদের আল্লাহ তায়ালা উদারচিত্তে ক্ষমা করেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন- এ জন্য এ রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবে বরাত’ ফার্সি ভাষার পৃথক দুইটি শব্দ।ফার্সিতে ‘শব’ মানে রাত আর ‘বরাত’ মানে মুক্তি। সুতরাং ‘শবে বরাত’ এর অর্থ হলো মুক্তির রাত। শবে বরাত হাদিসের চয়ন করা শব্দ নয়। হাদিসে রয়েছে লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান বা মধ্য শা’বানের রজনী।অর্থাৎ শা’বান মাসের ১৪ তারিখ সন্ধ্যার পর যে রাত সেটাই শবে বরাত। এই রাত নিয়ে প্রচুর গবেষণা, মনীষীদের উক্তি ও পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে আমাদের প্রত্যেকের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় থাকে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে। সেই করণীয় ও বর্জনীয় আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করছি।এ রাতে আমাদের করণীয়ঃ,কুরআন হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো। কেননা এটার মাধ্যমেই আমরা সব বির্তকের অবসান ঘটিয়ে একটি সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো। এই রাত সম্পর্কে একটি সহিহ হাদিস যা সুনানে ইবনে মাজাহ এর ইকামাতুস সালাত অধ্যায়ে আবু মুসা আল আশআরী থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (স) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মধ্য শা’বানের রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেন ও মুশরিক (আল্লাহর সাথে শিরককারী) এবং মুশাহিন (হিংসুক) ব্যতীতসকলকে ক্ষমা করে দেন।এই হাদিসের আলোকে আমার করণীয় এই যে, আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনই হিংসা ও আল্লাহর সাথে শিরক করা থেকে বেঁচে থাকবো। তবে যদি এ রাতে আমি ঘুমিয়েও থাকি তবে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। এ রাতে যেমনভাবে আমরা ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে উদগ্রিব হই আমাদের উচিত রাতের বরকতময় সময়ে ইবাদত করার জন্য উদগ্রিব হওয়া। কেননা প্রতিটি রাতেই একটি বিশেষ সময় আছে যখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন যে, কার কী দরকার সে যেন আমার কাছে চায়, আমি দেবো। কে আছো ক্ষমা চাইবার আমি মাফ করে দেবো। কে আছে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। আর তা হলো প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ এর শেষ অংশে যা ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে। হাদিসটি সহিহ মুসলিমের মুসাফিরের সালাত অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে। সেই অর্থে প্রতিটি রাতই কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সুযোগ নিয়ে আসে একথা আমরা অকপটে বলতে পারি। এই রাতে নিজস্ব পরিসরে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও তাসবিহ তাহলিল করা যেতে পারে। এবং এ রাতে কোনো ইবাদত করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। আর নফল সালাত বা ইবাদত ঘরেই করা বেশি ভালো। মাসজিদের জড়ো হয়ে এটাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিলে তা অবশ্যই বিদয়াত বলে গণ্য হবে যা একটি পাপ। তবে অবশ্যই কিছু সময় ঘুমাতে হবে যেন ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করতে পারি। যদি ঘুমের কারণে নামাজ বাদ পড়ে যায় তবে তা রাত্রের ইবাদতের অর্জনকে ম্লান করে। মূলত সবচেয়ে সেরা রাত হলো রমজান মাসের শেষের ১০ দিন। এই রাতকে যেন আমরা সেই সমস্ত রাত থেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ রাত না ভাবি সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক কথায় দ্বীনের জ্ঞান রাখতে হবে অবশ্যই। তবেই আমাদের জ্ঞান আমাদের এই রাতে করণীয় সম্পর্কে আমাদের আমল করতে বেশি উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি বর্জনীয় বিষয়গুলোও আমাদের সামনে চলে আসবে। আমাদের বর্জনীয় বিষয় গুলো হলোঃ মসজিদে জড়ো হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দোয়া করা, ভিড় করা, এক কথায় আনুষ্ঠানিক সকল কাজ এ রাতে অবশ্যই বর্জন করা উচিত। লাইটিং করা, হালুয়া রুটি খাওয়া, আতশবাজি ফুটানো, বিশেষ রজনী হিসেবে দলে দলে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন অবশ্যই বর্জনীয়।বাইক,অটো রিকশা, মোটরযান নিয়ে হর্ন বাজিয়ে সারা শহর প্রদক্ষিণ করা, সারা শহরের কবরস্থান জিয়ারত করা পরিহার করতে হবে। শুধুমাত্র শবে বরাতকে কবর জিয়ারতের জন্য বিশেষভাবে গ্রহণ করা। ইসলাম স্বীকৃত নয়, এমন প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও তা বর্জন করা। শিরক থেকে নিজেকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা। পাশাপাশি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত রাখা। ফজরের জামায়াতের সময় ঘুমানো। @সারারাত আমল হীন জাগ্রত থাকা।আড্ডার মাধ্যমে রাত যাপন করা, শুধুমাত্র চোখ মেলে রাখা?সর্বপরি আমাদের সারা বছর শিরক ও হিংসা থেকে বেঁচে থেকে রাতে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করার অভ্যাস করাটাই হবে এই রাতের আসল উদ্দেশ্য ও অর্জন। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যেন আল্লাহকে সিজনালি না ডাকি। প্রতি মুহূর্তে, ক্ষণে, দিনে তাকে ডাকতে হবে,নামাজ কায়েমের মাধ্যমে নামাজে,নামাযের পর মাসনূন দোয়া ও আমাদের দৈনন্দিন সকল আমলে সকল কাজে রাসুলুল্লাহ সাঃ এ-র নির্দেশিত সকল দোয়ার আমল করে আমরা দুনিয়া আখেরাতে সাফল্যমন্ডিত অর্থবহ জীবন হাসিল করতে পারবো। [লেখকঃ মাওলানা মোঃ জিয়াউর রহমান মিন্টু প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হুদায়বিয়া রেসিডেন্সিয়াল মডেল মাদ্রাসা, ময়মনসিংহ]
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মাজহারুল হক
Email: news.pratidinerbangladesh@gmail.com
ফোনঃ 01752-388928
প্রধান কার্যালয়ঃ লেভেল ১৫/এ, ১২ সোনারতরী টাওয়ার, বাংলামোটর, ঢাকা।
Copyright © 2025 প্রতিদিনের বাংলাদেশ. All rights reserved.