মো.শহিদুল ইসলাম:
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেকগুলোর নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সম্বলিত যা শিশুর রুচি মনন,বোধ পরিশীলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অন্তরায়। এ জন্য ওইসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সুন্দর ও রুচিশীল মানানসই নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ এ সক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
৬ মাসের মধ্যে পরিবর্তিত নাম সমূহের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। প্রাথমিক পর্যায় ২শ‘টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হবে বলে মনে করাস হচ্ছে। গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপজেলা ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলেও বিভিন্ন সময় অন্তঃউপজেলা,আন্তঃ উপজেলা ও আন্তঃ বিভাগে প্রয়োজনে বদলি করা হলে তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে, অধিদপ্তর থেকে উপজেলা পর্যায় পযর্ন্ত একটি বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি হতো। যার ফলে শিক্ষকরা সময় মত স্কুলে উপস্থিত হতে পারতোনা। এ জন্য আমরা বদলির সব কার্যক্রম অনলাইনে করে দিয়েছি যাতে শিক্ষকদের আর ভোগান্তি না হয়। বদলির তদবিরের জন্য বিভিন্ন জাগায় দৌঁড়াঝাঁপ করতে না হয়।
এ জন্য মন্ত্রণালয়ে থেকে বছরের নিদিষ্ট সময় গত ২২ ডিসেম্বার ২০২২ সংশোধিত একটি অনলাইন বদলী নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। যার পাইলটিং এ প্রাথমিক পর্যায় ৪ লাখ শিক্ষকে বদলির আওতায় আনা হযেছে। প্রথম পর্যায় মাত্র ৭দিনের মধ্যে ২৫হাজার শিক্ষকে বদলির সিন্ধান্ত দেওয়া হয়েছে । প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষক সিইনএড ছিল। পরে যুগের চাহিদা ও নতুন পাঠক্রম বিবেচনায় ২০১২ সালে দেশের সাতটি পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ডিপিএড কোর্স চালু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এটি পাইলটিং হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাইলটিং চলার পর কী সুবিধা হয়েছে কী অসুবিধা হয়েছে, যুগের চাহিদা মিটআপ করতে পারছি কি না, এর জন্য জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পিডিপি-৪ এর আলোকে এক বছর যাবত মাঠ পর্যায়ে মতামত নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মশালা করে মাঠ পর্যায়ের মতামত নেওয়া হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এসব মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফল এসেছে, ডিপিএডটি পরিচালিত হচ্ছে এডুকেশনাল মুডে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের পর ইনসার্ভিস ট্রেনিং এডুকেশন মুডে পরিচালিত হয় না। এটি হয় মৌলিক প্রশিক্ষণ। সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, যে শিক্ষকদের নিয়োগ করছি, তারা ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে গিয়ে পড়াবেন। আমরা চাই শিক্ষকরা গুড মেন্টর হবেন। এ কারণেই এটিকে এডুকেশন মুড থেকে বের করে একেবারে চাহিদাভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের এখন যে কোর্স কারিকুলাম চালু রয়েছে, দেড় বছরের মধ্যে ছয় মাস শিক্ষকদের স্কুলে অ্যাটাচমেন্ট ছিল।
দেড় বছরের মধ্যে থিওরিটিক্যাল যা রয়েছে, তা সম্পন্ন করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে। অ্যাটাচমেন্টে যে ছয় মাস শিক্ষকরা থাকেন সেখানে কোনো রকম মনিটরিং নেই, ইভ্যালুয়েশন নেই, এটি কোনো মূল্যায়নের আওতায় আসে না, শিক্ষকরা ফ্রি স্টাইলে চলে যান। এটি প্রশিক্ষণের অংশ হতে পারে না। সচিব বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি বাচ্চাদের ভালো মেন্টরিং করার জন্য। ভালো মেন্টরিংয়ের জন্য গুরুত্ব দেওয়া উচিত প্যাডাগোজির ওপর। বর্তমান ডিপিএডে তাত্তি¡ক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণে সবার মতামত নিয়ে প্যাডাগোজি ও মোটিভেশনাল আসপেক্টেকে গুরুত্ব দিয়ে কোর্স কারিকুলামকে পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষকদের এই অ্যাটাচমেন্ট হবে মূল্যায়নের আওবিটির আওতায়। তিনি বলেন, অ্যাটাচমেন্ট পিরিয়ডটাকে আমরা মূল্যায়নের আওতায় এনে ১০ মাসের কোর্স কারিকুলাম নতুনভাবে সাজিয়েছি। এটি যুগের চাহিদা মেটাবে, বাচ্চাদের মেন্টরিং করার জন্য যথাযথভাবে বিবেচিত হবে। আগের যে কোর্স কারিকুলাম রয়েছে, তার চেয়ে বেশি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণটি আগে বাধ্যতামূলক আবাসিক ছিল না। এটি বাধ্যতামূলক আবাসিক প্রশিক্ষণ হবে। শিক্ষক যোগদান করার পর যদি সাত বছর আট বছর পর মৌলিক প্রশিক্ষণ পান, তাহলে প্রশিক্ষণ কোনো কাজে লাগে না। সে কারণে আমরা ১০ মাসের পিটিবিটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।