নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কয়েকটি স্টেশনে ঘুরে আমি কতগুলো বক্তব্য শুনেছি। একটি কথা কয়েকজনে বলেছেন ভোট দিয়ে কী লাভ, ভোট তো এক জায়গায় চলে যাবে। আবার কেউ কেউ মুখে মুখেও বলেছেন, আপনারা যে যেখানে ভোট দেন, ভোট জায়গামতো চলে আসবে। আমরা বিষয়টি শুনেছি। এর মধ্যে আমরা জেনে গেছি, এটি হয়তো ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার অথবা ভ্রান্ত ধারণা। ভোট যেখানেই দেন সেখান থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ,সেটি আমরা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পিটিআই মিলনায়তনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটগ্রহণের বিষয়ে নিজেদের সন্দেহের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগে পোলিং এজেন্টরা দাঁড়িয়ে দেখে নিবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি না। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট গণনা এবং ঘোষণা পর্যন্ত তারা ওখানে উপস্থিত থেকে দেখবেন গণনা সঠিক হয়েছে কি না। যদি সব কেন্দ্রে গণনা সঠিকভাবে হয়ে গেছে দেখা যায়, তাহলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়ে যাবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে অনেকে কালো টাকার বিনিময় পেশাদার কিছু সন্ত্রাসী ব্যবহার করে। তারা যাতে ভোটকে প্রভাবিত না করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরাও যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। তারা আমাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কথা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়া, দুয়েক ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা আমাদের জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণে তারা সন্তুষ্ট।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফুটে উঠবে মিডিয়ার মাধ্যমে। কারণ মিডিয়ার কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে এবং ভেতরে থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে না। তারা সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ভেতরে ঢুকে সবই ছবি তুলতে পারবেন। সত্য-মিথ্যা জনগণকে জানাতে পারবেন। আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি যেখানে দুই ঘণ্টা পর পর প্রতিটি কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়লো ইনপুট দেওয়া হবে। মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপস ডাউনলোড করে সেটা সবাই জানতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০টার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপক নিয়েছি। যাতে ভোট গ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।
কোনো পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটলে প্রিজাইডিং অফিসারকে ভোট বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার যদি বন্ধ না করেন রিটার্নিং অফিসার অবহিত হলে তিনি বন্ধ করে দেবেন। তিনিও যদি বন্ধ না করেন, আর আমরা ঢাকা থেকে অবহিত হলে সেখান থেকে বন্ধ করে দেবো। কথাগুলো বললাম আমাদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটা অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি যাতে দূরীভূত হয়। আমরা নির্বাহী প্রশাসন ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। এখানে ওসি, ইউএনও, ডিসি ও এসপিদের বক্তব্য শুনেছি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো।
এর আগে দুপুরে নগরের পিটিআই মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আয়োজনে এই সভা শুরু হয়। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, জেলার পুলিশ সুপার,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার সচিব মো. জাহাংগীর আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ।