বাংলাদেশে আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্র বিরোধী পরিকল্পনার মোকাবেলায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।গত রবিবার বিকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ অডিটোরিয়ামে পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয় এবং ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র বিচ্ছিন্নতাবাদ বিরোধী বয়ানের মূল্যায়ন শীর্ষক আলোচনা আলোচনা সভার আয়োজন করে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ।
সভায় সংগঠনের সভাপতি মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) এর প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু, প্রধান আলোচক সহকারী এটর্নি জেনারেল এডভোকেট আলম খান, মূখ্য আলোচক ব্যারিস্টার মেজর (অবঃ) সরওয়ার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল (অবঃ) হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক, সাবেক সচিব ড. জকরিয়া, অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম, মো. সাহিদুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন, ১২ জুনুয়ারি এনসিটিবির সম্মুখে শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’এবং গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখেও একটি কর্মসূচি পালন করে, সেখান থেকে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ ৬ জনের প্রতিনিধি দলকে ডেকে নেয় চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনার জন্য। কিন্তু পরে সভারেন্টির প্রতিনিধি দলকে চেয়ারম্যানের পরিবর্তে পরিমার্জন কমিটির রাখাল রাহা সাথে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাখাল রাহা বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিদের মিছিল এনসিটিবি পর্যন্ত পৌঁছে সহিংসতা । একপর্যায়ে উপজাতিরাই ঘটনাস্থলে এসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রদের উপর হামলা চালায়।
ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বিষয়ে বক্তাগণ বলেন, ভারতীয় উসকানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র তৈরির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা।
সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে বলদ হয়েছে, ভারতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করা হচ্ছে, ছড়ানো হচ্ছে প্রতিহিংসা। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে এবং ঐ অঞ্চলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে একটি প্রক্সি যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আরাকান আর্মির সুসম্পর্ক থাকায় আরাকান আর্মির মাধ্যমেও বাংলাদেশের সাথে প্রক্সি যুদ্ধ করানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আহবান করছি।
বক্তাগণ আদিবাসী প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে বাঙ্গালিরাই আদিবাসী হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি বহিরাগত ‘উপজাতি’ জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ব্যবহৃত ইন্ডিজেনাস শব্দটির অপব্যাখ্যা দিয়ে একদল দেশদ্রোহী ভূরাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যালোচনা করলেই বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে। অযৌক্তিকভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে দিয়ে কোনো একটি জনগোষ্ঠীকে মর্যাদামণ্ডিত করা যায় না।
আদিবাসী দাবিদার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাষ্ট্রদ্রোহি ঘোষণা দিয়ে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। দাবিগুলো হলো—
১। বাংলাদেশের সকল নাগরিক বাংলাদেশি এর আলোকে সকল জাতিকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সকল জাতি সত্ত্বাকে স্ব—স্ব জাতের নাম উল্লেখ পূর্বক সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২। পার্বত্য চট্টগ্রামের আত্মঘাতী সংঘাত বন্ধ ও শান্তি প্রতিষঠায় “শান্তি চুক্তি নামক ” অবৈধ কালো চুক্তি বাতিল করে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিয়ে সম্প্রীতি কমিশন গঠন করতে হবে।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্র বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূল ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে একটি সামরিক কমিশন গঠন করতে হবে।
৪। বৈষম্য মুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে সারাদেশে ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নাগরিকে সাংবিধানিক সমঅধিকার প্রদান ও প্রচলিত ভূমি আইনসহ কার্যাকর করতে হবে। এক্ষেত্রে ভূমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পার্বত্য অঞ্চলেই সরকারি ভাবে স্থায়ী পূর্ণবাসন করতে হবে।
৫। আদিবাসী দাবিদারদের দেশদ্রোহী ঘোষণা দিয়ে ২০১৮ সালে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বন্ধে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে আদিবাসী শব্দ যুক্ত করিদের চিহ্নিত করে শাস্তির প্রদান করতে হবে।
৬। পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্রিটিশ প্রবর্তিত শাসনবিধি ১৯০০ বাতিল করে, বাংলাদেশের সকল জাতির স্ব স্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।
৭। বাংলাদেশ বসবাস করে প্রতিবেশী ও পশ্চিমাদের অর্থায়ণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩২ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কার্য সম্পূর্ণ করতে হবে।
অনতিবিলম্বে আদিবাসী দাবিদার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাষ্ট্রদ্রোহি ঘোষণা দিয়ে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মাজহারুল হক
Email: news.pratidinerbangladesh@gmail.com
ফোনঃ 01752-388928
প্রধান কার্যালয়ঃ লেভেল ১৫/এ, ১২ সোনারতরী টাওয়ার, বাংলামোটর, ঢাকা।
Copyright © 2025 প্রতিদিনের বাংলাদেশ. All rights reserved.