আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা স্থিতিশীল বজারে সাত বছর পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে সম্মত হয়েছে ইরান ও সৌদি আরব। চীনের মধ্যস্ততায় কয়েকদিনের আলোচনার পর শুক্রবার তেহরান-রিয়াদ এ চুক্তিতে পৌঁছায়। আঞ্চলিক দুই দেশের এমন পদক্ষেপ স্বাগত জানিয়েছে অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ। যুক্তরাষ্ট্রও বিষয়টিকে ইতিবাচক দেখছে।
চীন
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারকে অশান্ত বিশ্বে ‘প্রধান সুসংবাদ’ এবং সংলাপ ও শান্তির জন্য একটি ‘জয়’ বলে বর্ণনা করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইকে বলেন, চীন বিশ্বব্যাপী হট স্পটগুলোতে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। একটি নেতৃস্থানীয় জাতি হিসেবে আমরা আমাদের ‘দায়িত্ব’ পালন করব।
যুক্তরাষ্ট্র
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য ইরানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে সরাসরি জড়িত ছিল না।
কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, সৌদিরা আমাদের এই আলোচনার বিষয়ে আমাদের অবহিত করেছে, যেভাবে আমরা তাদের আমাদের ব্যস্ততার বিষয়ে অবহিত করেছি। তবে আমরা সরাসরি এতে জড়িত ছিলাম না।
ইরাক
২০২১ সাল থেকে সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে কয়েক দফা পুনর্মিলন আলোচনার আয়োজন করেছিল ইরাক। এবার আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছে বাগদাদ।
ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় খোলা হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন।পাশাপাশি চুক্তিটি সফল হওয়ায় জন্য চীনের ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
আনোয়ার টুইটারে লিখেন, আরব আমিরাত অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ইতিবাচক যোগাযোগ ও সংলাপের গুরুত্বে বিশ্বাস করে। সবার জন্য আরও স্থিতিশীল ভবিষ্যত গড়ে তোলার পক্ষে সবসময় আরব আমিরাত।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা
ইয়েমেনের ইরান সমন্বিত হুথি আন্দোলনের প্রধান আলোচক মোহাম্মদ আবদুলসালাম বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে হারানো নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করতে ইসলামিক জাতির জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন।
ইয়েমেনের সরকারকে সমর্থনকারী একটি দলগত জোটের বিরুদ্ধে হুথিদের প্রতি আট বছরের যুদ্ধের ফলে ইয়েমেন বিভক্ত হয়েছে। ইয়েমেন সরকারের পক্ষে আছে সৌদি নেতৃত্তাধীন জোট, অন্যদিকে হুতিদের মদদ দিয়ে আসছে ইরান।
ওমান
রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের যৌথ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ওমান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি এক বিবৃতিতে জানান, এট জয় সবার। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে উপকৃত করবে এটা।
কাতার
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলান। চুক্তিকে স্বাগত জানাতে ইরান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ডেকেছেন তিনি।
লেবাননের হিজবুল্লাহ
লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, তার সমর্থক ইরান এবং দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার একটি ‘চমৎকার উন্নয়ন’।
মিসর
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চুক্তিটি এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে অবদান রাখবে বলে কায়রো আশা করে।
বাহরাইন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে বাহরাইনের বার্তা সংস্থা জানায়, চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে হওয়া চুক্তিকে বাহরাইন স্বাগত জানিয়েছে।
তুরস্ক
সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মতে, তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সৌদি প্রতিপক্ষের সঙ্গে ফোন কলে চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) সম্পর্ক পুনরায় চালু করার জন্য সৌদি-ইরান চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে।
চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য অবদান রাখার ক্ষেত্রে চীনের ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসা করেছে পিএ। তারা আশা করেছে, এই পদক্ষেপটি অঞ্চলে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে।
সূত্র: আল জাজিরা