জলি ইসলাম: সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোতে আজ থেকে যোগদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা ‘প্রত্যয়ে’ অন্তর্ভুক্ত হবেন। সে অনুযায়ী এই কর্মসূচিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও যুক্ত হতে হবে। তবে শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচিতে যুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। যেহেতু আজ থেকে এই স্কিম চালু হচ্ছে, এ কারণে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে এই কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন তারা। এই কর্মসূচির ফলে কার্যত দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়বে। সব ধরনের ক্লাস বন্ধ থাকবে, সব পরীক্ষা তারা বর্জন করবেন। মিডটার্ম, ফাইনাল ও ভর্তি পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ রাখবেন। একাডেমিক কমিটি, সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভাও অনুষ্ঠিত হবে না।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূলফটকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া। সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে আমরা বিবৃতি, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। তবে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আমরা এখনো আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। এ সময় তিনি ১ জুলাই থেকে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন।
নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, সাধারণত উন্নত দেশগুলোতে এই ধরনের স্কিম চালু করলে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়। কিন্তু এই স্কিম চালু করার সময় আমাদের কাউকে ডাকা হয়নি। কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি ছিল না। পেনশনের জন্য বেতন থেকে ১০ পার্সেন্ট টাকা কেটে রাখার কথা বলা হয়েছে এই স্কিমে, কিন্তু আগে তা ছিল না। টাকা কেটে রাখার বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাব। কিন্তু অন্যান্য সুবিধাগুলো আমরা আগের মতোই বহাল চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে অংশ নেবেন না শিক্ষকরা :আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এতে অংশ নেবেন না শিক্ষকরা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। তিনি বলেন, এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তাই শিক্ষকদের মর্যাদা হনন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। এদিকে ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ৯টি কর্মসূচি দিয়েছে। এগুলো হলো অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাসসহ সব ধরনের ক্লাস বন্ধ থাকবে, সব পরীক্ষা বর্জন-মিডটার্ম, ফাইনাল ও ভর্তি পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না; বিভাগীয় চেয়ারম্যান বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ রাখবেন; একাডেমিক কমিটি, সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে না। অনুষদের ডিনবৃন্দ ডিন অফিস, ভর্তি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন; নবীন বরণ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবে না; কোনো সিলেকশন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে না; কোনো সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে না; হলের প্রাধ্যক্ষগণ প্রাধ্যক্ষ অফিস বন্ধ রাখবেন এবং প্রধান গ্রন্থাগারিক কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ রাখবেন।