শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
২৪ ঘন্টায় লাইভ খবর পেতে চোখ রাখুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে

বছরের শুরুতে বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

Reporter Name / ২৫ Time View
Update : শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

শাহিন চৌধুরী: প্রাথমিকে বই ছাপানোয় নিয়ে আবারও জাতীয় শিক্ষা ক্রয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সিন্ডিকেটের দুর্নীতির আলোচনায় প্রফেসর ডক্টর রিয়াদ চৌধুরী সদস্য পাঠ্যপুস্তক জাতীয় শিক্ষা ক্রয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এন সিটিবি। ৩০টি প্রতিষ্ঠানের ৫০ হাজার বই, ২ লাখ ৩০ হাজার বইয়ের ফর্মা ও ১২ হাজার কাভার বিনষ্ট করেছে এনসিটিবি ১০ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে শোকজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই মুদ্রণের দায়িত্ব থাকলেও সব দায়িত্ব আমার একার নয় : সদস্য পাঠ্যপুস্তক, এনসিটিবি (মেহেদী হাসান ) প্রাথমিকে বই ছাপানোয় আবারও সিন্ডিকেট।

আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে কোমলমতি শিশুদের জন্য পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে একাধিক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধীনে ৬৭টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান এবার প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ পেয়েছে মোটা অংকের কমিশনের মধ্য দিয়ে । জানা গেছে, নিয়ম ভঙ্গ করে এনসিটিবি দরপত্রে উল্লিখিত নির্ধারিত মানের কাগজ, ছাপা ও বাঁধাই উপকরণ ব্যবহার না করে অন্তত ৩০টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ করেছে। এনসিটিবি অভিযুক্তদের কিছু বই, ফর্মা ও কাভার বিনষ্ট করলেও এর বাইরে আরও কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে প্রফেসর ডঃ রিয়াজ চৌধুরীর কারসাজি। প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে মোট অংকের কমিশন যার কারণে ঠিকাদার অনিয়ম করেছেন।

এদিকে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আর মাত্র দেড় মাস বাকি। এর মধ্যে মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। তবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কাজ এখনো বাকি। এর ফলে শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতেই বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এবার মাধ্যমিকের ২১ কোটির বেশি বই এবং সময় স্বল্পতার কারণে এসব ছাপানোর কাজেও বেশি দুর্নীতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩০ ভাগ নিম্নমানের বই দিয়েছে কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২৯ প্রতিষ্ঠানকে নাম মাত্র জরিমানা করা হলেও অধিকাংশ ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। আবার ২৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাস্টার সিমেক্সসহ ৬টিকে করা হয় জরিমানা মওকুফ। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো অভিযুক্তরা এবারও বেশি কাজ পেয়েছে। তবে এসব কিছুর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক (সদস্য) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার সব সেক্টরে পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই ছাপায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। এ বিভাগে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষেও ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের বই দেওয়ার অভিযোগ আছে। এবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জানা যায়, এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক (সদস্য) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির খাস লোক ছিলেন। আওয়ামী সরকারে আমলে তিনি মাদ্রাসা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) দায়িত্ব পালন করেন। এনসিটিবির ভান্ডার ও উৎপাদন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার রয়েছে কঠিন সিন্ডিকেট। প্রেস ও কাগজের মালিকদের সঙ্গেও রয়েছে সখ্য। বর্তমানে এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক (সদস্য) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী আওয়ামী আমলের একজন সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। তিনি এনসিটিবির প্রভাবশালী কর্মকর্তা। বই ছাপানোর অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেন না তিনি। শিক্ষার্থীদের সময়মতো ভালোমানের বই দেওয়াসহ উৎপাদনের সব দায়িত্বে থাকলেও বই ছাপাতে অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেন না তিনি। অনিয়মে অভিযুক্ত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে জড়িতদের কারও শাস্তি হয় না। বই ছাপানোর সব সিদ্ধান্ত উনার দপ্তর থেকে এলেও চেয়ারম্যানের অজুহাত দিয়ে তিনি সবকিছু এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী  বলেন, এবার বই ছাপাতে যেসব মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তবে গত বছরের ব্যাপারটা ছিল ভিন্ন। তখন কাজের চাপও বেশি ছিল। এর পরেও কোনো মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে আমরা ছাড় দেইনি। ৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের জরিমানা মওকুফ করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ওই সময় দেশে ছিলাম না। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই উৎপাদনের দায়িত্ব থাকলেও সব দায়িত্ব আমার একার নয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসাবে চেয়ারম্যান রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত বই দিতে আমরা রাত-দিন কাজ করছি। এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদের দৌড়ঝাঁপের বিষয়টি সত্য নয়। এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক শাখা সূত্রে জানা গেছে, এনসিটিবি ইতোমধ্যে নিম্নমানের কারণে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০ হাজার বই, দুই লাখ ৩০ হাজার বইয়ের ফর্মা ও ১২ হাজার কাভার বিনষ্ট করেছে। এছাড়া দশটি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ নোটিশ দিয়েছে। অস্পষ্ট ছাপা ও মুদ্রণের মারাÍক ত্রুটির কারণে সম্প্রতি ১৪টি প্রতিষ্ঠানের বই নষ্ট করা হয়। এছাড়া মুদ্রণমান খারাপ হওয়ায় ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বইয়ের ফর্মা বিনষ্ট করা হয়েছে।

এদিকে নিম্নমানের বই ছাপানোয় ১০ প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার এনসিটিবির অতিরিক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী অবসরে যাওয়ায় চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। এতে করে পাঠ্যবই সংক্রান্ত সব ধরনের কাজে স্থবিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে এনসিটিবির গুরত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় সামনে মাধ্যমিক স্তরের ২১ কোটিরও বেশি বই ছাপাতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সময় স্বল্পতা ও বইয়ের পরিমাণ বেশি হওয়ায় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই অনিয়মের সুযোগ নিতে পারে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির চেয়াম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারীকে দেওয়া হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র আরও জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯টি বই শিক্ষার্থীদের বিতরণ করা হবে। রোববার পর্যন্ত মোট বই বাইন্ডিং হয়েছে ৭ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭২ কপি। যা শতকরা হিসাবে ৮৪ শতাংশ। মোট বই পিডিআই হয়েছে ৫ কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৬৬ কপি। যা শতকরা হিসাবে ৭০ শতাংশ। মোট বই ডেলিভারি হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ কপি। যা ৬১ শতাংশ। এছাড়া মাধ্যমিক স্তরে ২১ কোটি ৪০ লাখ বই বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বিতরণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Developer Ruhul Amin