অনলাইন ডেস্ক:
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা মজুতদারি, কালোবাজারি এবং যারা এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করবে; তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব। মানুষের কষ্ট যেন না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবের একথা বলেন তিনি।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্যপণ্য কেনার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে জানিয়ে, অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মুক্তির জন্য সমবায় মালিকানার ওপর গুরুত্ব দেবেন কি না- সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান শম্ভু।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে আমাদের দেশের অর্থনীতি তিন ধরনেরই আছে; সরকারি, বেসরকারি এবং সমবায়—ভিত্তিক। আমাদের সমবায়—ভিত্তিক কিন্তু আছে। নেই যে তা নয়। তবে এখানে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারছি যে সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দারুণ অভাব দেখা দেবে। এজন্য শুরু থেকেই সবাইকে আহ্বান করছি, প্রত্যেকের যেন এক ইঞ্চি অনাবাদী জমি না থাকে। যত অনাবাদী জমি আছে, আবাদ করা হোক। উৎপাদন করা হোক। ফসল, ফলমূল তরি-তরকারি, শাকসবজি- যে যা পারুক উৎপাদন করেন। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল; যে যা পারেন সকলে লালন-পালন করেন। আমাদের খাদ্যের চাহিদা যেন আমরা নিজেরা নিজেদের আওতায় রাখতে পারি, সে ব্যবস্থাটা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই আহ্বান করার পরে কিন্তু এখন আসলে সমগ্র দেশেই একটা উৎসব দেখা দিচ্ছে। আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং সব দেশের মানুষই কিন্তু কিছু কিছু উৎপাদন করেছে। দেশের মানুষের ভোগ্যপণ্যের অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে সেজন্য ভোগ্যপণ্য অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সালে আমরা পাশ করেছি। তারই অধীনে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আমাদের খাদ্য মন্ত্রণালয়- সকল ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে; যাতে করে মানুষের কষ্ট না হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আমি সংসদ সদস্যের সাথে একমত, আমাদের কিছু ব্যবসায়ী যারা এই ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করেন; আসলে এটা খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় রোজা রমজান মাসে কিংবা বিভিন্ন চাহিদার মাসে তারা যে করেই হোক জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে উৎসব পার্বণে সবসময় তারা দাম কমায়। আর আমাদের দেশে দেখি উল্টো। শুধু তাই নয়, অনেক সময় তারা পণ্য আমদানি করতে একটু ঢিলেমি করে, জিনিসের দাম বাড়িয়ে চাহিদা বাড়িয়ে তারপর তারা ব্যবসা করতে চায়। এটা আসলে অমানবিক। যারা মজুতদারি, কালোবাজারি এবং যারা এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব। মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।
কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন দুর্নীতি বিষয়ে মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে কোনও সরকারি বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেউ। এটা আওয়ামী লীগ সরকার করতে পেরেছে।
আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে আমি আমার প্রশ্নকর্তাকে চ্যালেঞ্জ করছি, কোথায়, কখন, কতটুকু দুর্নীতি হয়েছে সেই কথাটা তাকে এখানে (সংসদে) স্পষ্ট বলতে হবে। তার জবাব আমি এখানে দেব। একটি কথা আমি এখানে স্পষ্ট বলতে চাই, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। সেখানে কি কোনও দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয় নাই। তারা প্রমাণ করতে পারে নাই। এটা শুধু আমার কথা না। কানাডার ফেডারেল কোর্টে যে মামলা হয়, সেই রায়ে বলা হয়েছে সকল অভিযোগে মিথ্যা, কোনও অভিযোগই সত্য না। সবগুলোই ভুয়া।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে এরা কীভাবে বলবে দুর্নীতি হচ্ছে? যদি দুর্নীতি হত, তাহলে এত অল্প সময়ে ইতোমধ্যে এত বড় বড় প্রজেক্টের কাজ শেষ হতো কোনদিন? এর আগে কখনও হয়েছে?
তিনি বলেন, প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। তার একটি সেকেন্ড হোম রয়েছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড়শ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ইনফ্লেশন ১৩.৩ শতাংশ।
সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয় এবং প্রতিটি বিল পরীক্ষা করা হয়। যে নির্দেশনা তার চাইতে এক ফোঁটা বেশি হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, ফাইন করা হয়। বাংলাদেশে এখনও সে অবস্থার সৃষ্টি হয় নাই।
তিনি বলেন, আর এই যে কুইক রেন্টালের কথা বলা হচ্ছে- হ্যাঁ এগুলোর প্রয়োজন ছিল। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এনেছিলাম বলেই বিদ্যুৎ আমরা মানুষকে দিতে পেরেছিলাম।
বিএনপি-জামাতের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন হ্রাস করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ পেত না। দিনের পর দিন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো চলতে পারত না। গ্যাসের জন্য হাহাকার ছিল। আমরা এসে এসব সমস্যার সমাধান করি। সে অনুযায়ী আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।
এরপর যারা বেশি বলবেন তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও সংসদে হুমকি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।