মোঃ জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ
প্রায় ৪ মাস আগে কুষ্টিয়া সদরের সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ রায় বদলি হয়েছেন। এরপর থেকে সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় অফিসের কার্যক্রম অচলাবস্থায়। গত এক মাস আগে নতুন সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে আমেনা খাতুন যোগদান করেন। একদিন অফিস করে এপর্যন্ত তিনি ছুটিতে রয়েছেন।
ফলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সকল কার্যক্রম স্থবির। জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও সেবা প্রার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। অন্যদিকে সরকার প্রতিদিন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দুই-একদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অন্য উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যা সমাধান না হওয়ায় অফিসের অবস্থা নাজুক বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রার সৈয়দা রওশন আরা।
এছাড়া কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সরকারি এই কার্যালয়টি। ঘুষ-দুর্নীতির আখড়াখানা নামে পরিচিতি ছড়িয়েছে। অবিলম্বে দুর্নীতর আতুর ঘর খ্যাত কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে একজন দায়িত্ববান, সৎ, যোগ্য সাব-রেজিস্ট্রারকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। অফিসের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের দিকে চেয়ে আছেন ভুক্তভোগীরা।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪ মাস আগে কুষ্টিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ রায় দিনাজপুরে বদলি হয়। এরপর থেকে সাব-রেজিস্ট্রার শূন্য অফিসের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে দুই একদিন অন্য উপজেলা থেকে সাব-রেজিস্ট্রার এসে কাজ করেন। গত এক মাস আগে ঝিনাইদহ সদর থেকে বদলি করে সাব-রেজিস্ট্রার আমেনা বেগমকে কুষ্টিয়া সদর অফিসে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর অফিসের প্রথম দিনেই দলিল লেখকদের সাথে নতুন সাব-রেজিস্ট্রারের ঝামেলা হয়। এরপর থেকে আমেনা বেগম অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে আছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ। প্রতিদিন গড়ে ৫০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। এতোদিন ধরে দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় দলিল করতে আসা দাতা ও গ্রহীতারা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনি সরকারও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। জমি কেনাবেচা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলন করতে এসে সেবাগ্রহীতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অপরদিকে বেকার সময় পার করছেন দলিল লেখক ও তাদের সহকারীরা। এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের অভাবে কাজ হচ্ছে না। দলিল নিতে এসে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। দলিল রেজিস্ট্রি ও দলিলের নকল না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর ছাড়া কিছুই হয় না। এমন গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তা মাসের পর মাস না থাকায় মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় সব কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়।
কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সীমাহীন দুর্নীতি আর অনিয়মের ভোগান্তি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসের সামনে বোর্ডে যে সরকারি ফি লেখা থাকে সেই টাকায় কেউ কাজ করতে রাজি হয় না। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি টাকা দিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন সেবাগ্রহীতারা। সরকারের কাছে আমরা এইসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রার সৈয়দা রওশন আরা বলেন, প্রায় ৪ মাস ধরে সাব-রেজিস্ট্রার নেই। গত এক মাস আগে একজন যুক্ত হয়েছে। সে একদিন অফিস করার পর থেকে ছুটিতে আছে। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। অন্যান্য উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রাররা আমার কথা শোনেনা। মাঝেমধ্যে দুই একদিন অফিস চলে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি, কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা বলেন, আমরা কোনো দুর্নীতির সাথে যুক্ত না। নতুন সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে কোনো ঝামেলা হয়নি আমাদের। সুব্রত স্যার যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ মাস ধরে নিয়মিত অফিস চলছে না। নতুন সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে আমেনা ম্যাডাম রোজার মধ্যে মাত্র একদিন অফিস করেছে, সেদিন ১৪টা দলিল করেছিলো। এখন উনিই দায়িত্বে আছেন। কিন্তু অফিস করেন না। উনি মাত্র একদিন অফিস করেছে। ব্যাক পেইনের সমস্যার জন্য উনি না-কি ছুটিতে আছে। অথবা কুষ্টিয়া অফিস হয়তো তার ভালো লাগেনি। সে ঝিনাইদহ ছিলো, ওখানে হয়তো ভালো ছিল। এসব অফিস মন মতো না হলে কেউ থাকে না। সদর অফিসে চাপ বেশি। স্থায়ীভাবে একজন সাব-রেজিস্ট্রার ছাড়া এই অফিস চলে না। এজন্য সপ্তাহে ৫ দিন অফিস চলা দরকার, স্থয়ী সাব-রেজিস্ট্রার দরকার। অফিস বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য সাব-রেজিস্ট্রার আমেনা বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।