মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশঃ
২৪ ঘন্টায় লাইভ খবর পেতে চোখ রাখুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে

কৃষকদের উৎপাদিত বীজে চাহিদা মিটাচ্ছে সিংহভাগ পাটচাষী

Reporter Name / ৬৯ Time View
Update : রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩, ৩:২১ অপরাহ্ন

মোঃ সরোয়ার হোসেন,ভাঙ্গা(ফরিদপুর)প্রতিনিধিঃ

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উচ্চ ফলনশীল জাতের রবি-১ নাবী পাটবীজ উৎপাদন করে এলাকার কৃষকরা ব্যাপক সফলতার মুখ দেখেছে। উপজেলা পাট অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে এলাকার কৃষকরা পরীক্ষামূলকভাবে নাবী পাটবীজ উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তারা। স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদন করতে পারলে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আমদানী নির্ভরতা কমবে।

সেই সাথে সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমান অর্থ, আর পাট উৎপাদনে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি কৃষিতে সক্ষমতা বৃদ্বি পাবে। কিন্ত নাবী জাতের পাট বীজ উৎপাদনের জন্য এ উপজেলায় নাবী পাটবীজের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ না থাকায় পাট অধিদপ্তর থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেননা স্থানীয় কৃষকরা। ফলে এলাকায় নাবী পাটবীজ উৎপাদনের অনুকুল পরিবেশ থাকা সত্তে¡ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃষক পাট বীজ উৎপাদন করতে পারছেননা। সংশ্লিষ্ট উপজেলা পাট অফিস থেকে জানা গেছে, ভাঙ্গা উপজেলায় নাবী পাটবীজ উৎপাদনের জন্য পাট অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় কোন বরাদ্দ ধার্য্য নেই।

স্থানীয় পাট অফিসের কর্মকর্তা, জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার সহযোগীতায় অন্য উপজেলার ধার্য্যকৃত বরাদ্দ থেকে কিছু নাবী পাটবীজ এনে পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষকদের বীজ উৎপাদনের জন্য উদ্বৃদ্বকরনে কাজ করছে এবং কৃষকরা সফলতা পেয়েছে। ভাঙ্গা উপজেলা পাট উৎপাদন ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। কৃষকরা সাধারনত ভারতীয় আমদানী করা বীজের উপর নির্ভরশীল। এতে প্রচুর বৈিেশক মুদ্রার অপচয় হয়, তেমনি উপযুক্ত সময়ে বীজের যোগান দিতে না পারায় পাটচাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্থানীয় কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা গেছে, নতুন জাতের এই পাট থেকে সাধারন তোষা পাটের জাতের চেয়ে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়। মাত্র ১১০ দিনেই এই পাট থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায় বলে, এই পাট চাষ করে বীজ উৎপাদনের দিকে ঝুকছে কৃষকরা। এবং এ মৌসুমে এ উৎপাদিত বীজই এখন কৃষকরা মাঠে বপন করছেন।

উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের কামারকান্দা,চান্দ্রা ইউনিয়নের সোনাময়ী গ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে উল্লেখযোগ্য জমিতে এই রবি-১ জাতের নাবী পাটবীজ চাষ করে বীজ উৎপাদন করছে। গত বছর পরীক্ষামূলক সফলভাবে উৎপাদন করার পর এ বছর কৃষকরা আরও বীজ উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। উৎপাদিত বীজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করতে পারবে বলে জানান তারা। তাছাড়া ভারতীয় পাট বীজ যাতে বাংলাদেশের বাজার দখল করতে না পারে, এ জন্য বীজ উৎপাদনের কাজটি বাস্তবায়ণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন উপজেলা পাট অফিসের কর্মকর্তাগণ। সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সাধারনত ভারতীয় পাট বীজ ব্যবহার করে পাট উৎপাদন করে কৃষকরা। কিন্তু অনেক সময় ভাল বীজ পাওয়া নিয়ে শংকিত থাকতে হয়। এছাড়াও ভারতীয় বীজের অনেক দাম।

সোনালী আশের পুরানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে নতুন উদোমে মাঠে নামে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ও পাট অধিদপ্তর। তারা এই রবি ১ জাতের পাট বীজ উৎপাদন করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতমধ্যে ভাঙ্গা উপজেলার বেশ কিছু চাষীদের নিয়ে এই নাবী পাটবীজ উৎপাদনের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তারা প্রতি বিঘা জমি থেকে ২-৩ মন করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তারা। সে ক্ষেত্রে এই সকল কৃষকের উৎপাদিত পাটবীজ পাট অধিদপ্তর ও বি,এ,ডি,সি ক্রয় করতে পারে । এক বিঘা জমি থেকে একজন কৃষক মাত্র ১১০ দিনে ২০-২৪ হাজার টাকা আয় করছে কৃষকরা। বিশেষ করে বীজের জন্য চাষ করা এ পাট থেকে শাক বিক্রি করেও বেশ টাকা আয় করা সম্ভব। উপজেলার জঙ্গলকান্দা গ্রামের কৃষক আবু মিয়া জানান, তিনি এবার তার ১ একর জমিতে এই রবি-১ জাতের পাট বীজ বোপন করেন। তার আশানুরুপ ১ একর জমিতে প্রায় ৫-৭ মন রবি ১ জাতের বীজ উৎপাদন করতে পেরেছেন। ফলন অনেক ভাল হয়েছে। মাত্র ১১০ দিনে তিনি তার জমি থেকে সব মিলে ৬৫-৭০ হাজার টাকা আয় করতে পেরে যথেষ্ট খুশি তিনি। অপর দিকে উপজেলার সোনাময়ী গ্রামের সিরাজ মোল্লা জানান, তিনি এ মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে পাট বীজ আবাদ করেছেন। তার যথেষ্ট ভাল মানের বীজ উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদিত বীজে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তিনি এখন বাজারে বিক্রি করবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, ২০১৯ সালের আগের বছরগুলোতে চাষীরা সঠিক সময়ে বীজ,সার না পাওয়ায় নাবী পাটবীজ করতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন।পরবর্তীতে কৃষকদের সাথে নিবীর সম্পর্ক,আলোচনা ও সঠিক পরামর্শ প্রদান করায় চাষীরা নাবী পাটবীজ উৎপাদন করার জন্য ানেক আগ্রহ প্রকাশ করায় জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার সহযোগীতায় অন্য উপজেলা থেকে কিছু রবি-১ জাতের নাবী পাটবীজ পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন করায় ব্যপক সফলতার মুখ দেখেন কৃষকরা। তিনি আরও বলেন, ভাঙ্গা উপজেলার জন্য প্রকল্পের আওতায় বীজ ,সার,কীটনাশক এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণের বরাদ্দ পেলে এ অঞ্চলের কৃষকরা ব্যপকভাবে উন্নতি করবে। সেক্ষেত্রে,পাটবীজের বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশী বীজের প্রসার ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকাংশে সাশ্রয় হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Developer Ruhul Amin