মোঃ জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রায় মেহেরপুর জেলার সমান আয়তনের একটি জনবহুল এলাকা। অবস্থানগত কারণে ভারতের সাথে ৪২ কি.মি. বর্ডার থাকার কারনে মাদকের বিষয়টি অনেক ওপেন সিক্রেট। তাছাড়া, সীমান্ত দিয়ে মাদক চোরাচালান, গাজা চাষ এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে চরম অশান্তি বয়ে আনে। অন্যদিকে, তামাক উৎপাদন ও তামাকের বহুবিধ ব্যবহার বিষিয়ে তুলে যুবসমাজের অনেককে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান ও যুব সমাজকে মরন ফাঁদ থেকে বাঁচাতে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন দৌলতপুরের ইউএনও মো. আব্দুল জব্বার। তাঁর সাথে বিশেষ আলাপচারিতায় জানা যায়, তাঁর অফিসে এমন কোন সপ্তাহ নেই, যে সপ্তাহে কোন মা অথবা বাবা তার নেশাগ্রস্থ সন্তানকে ফেরাতে আইনের সাহায্যে চান না। বিষয়টি তাকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। পরে মোবাইল কোট পরিচালনা করার পাশাপাশি মাদক হতে মুক্তির জন্য তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেন। তার সদিচ্ছা ও মাদকের কুফল হতে বেরিয়ে আসতে অনুকরণীয় পদক্ষগুলো সবার নজরে আসে। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার, অফিসার ইনচার্জ, সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দৌলতপুরে প্রায় ৫১ কি.মি. ব্যাপী ‘রোড শো’ করেন। যা সকল মহলে অত্যন্ত প্রশংসিত হয় এবং সৃষ্টি হয় সচেতনতার। দাপ্তিরক প্রয়োজনে যেখানে গেছেন সেখানেই মাদক থেকে মুক্তির জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তিনি। সীমান্ত বেষ্টিত ইউনিয়নের পথে পথে ‘পথ সভা’ করছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা করছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৩জন শিক্ষার্থী তার আহবানে সাড়া দিয়ে মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে আলোর পথে এসেছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরায় তাদের পিতা-মাতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। সমাজে চলার কারনে তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
মাদকের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইউএনও স্যার মাদক থেকে তরুন সমাজ, ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে দূরে রাখার জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। মাদক থেকে মুক্তির জন্য ‘সুধী সমাবেশ’ করছেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে তিনি এ কাজটি করে যাচ্ছেন নিরন্তর। আইন শৃক্সখলা মিটিং-এ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাসিক মিটিং, স্কুলের অভিভাবক সমাবেশে উদ্বুদ্ধকরণ, গ্রামপুলিশকে কাজে লাগানো, ব্যবসায়ীদের নিয়ে নিয়মিত আলোচনা ও বিভিন্ন দপ্তরের মিটিং-এ আলোচনার মাধ্যমে মাদকের কুফল ও মুক্তির বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরতে নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল জব্বার। তিনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে মাদকের করুন পরিণতি ও সামাজিক অস্থিরতার কথা তুলে ধরছেন। দৌলতপুর উপজেলায় মাদকের প্রকোপ বেশি থাকায় স্যারের অনবদ্য উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে অনেক পরিবারে শান্তি ফিরাতে ভুমিকা রাখছে। ইউএনও স্যারের মতো সকলে যদি এগিয়ে আসত তাহলে নিশ্চয়ই মাদক থেকে পরিত্রানের অনেক পথ উন্মোচিত হত।
মাদক থেকে মুক্তি ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা মানুষগুলোর পুনর্বাসন ও পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মো. আব্দুল জব্বার বলেন, মান্যবর জেলা প্রশাসক স্যার যাদের পুনর্বাসন করা দরকার তাদের বিষয়ে সহযোগিতা করছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) স্যার আইনি বিষয় ও বিভিন্ন সংস্থার সাথে (বিজিবি, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, র্যাব, পুলিশ) সমন্বয়ে বিষয়ে সহযোগিতা করছেন। অফিসার ইনচার্জ দৌলতপুর থানা গোপন অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ীসহ মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোট পরিচালনায় সাহায্য করছেন।
মূলত, দৌলতপুরের ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জীবন ধারনের পেশা, অর্থকরী ফসল (এখন বৃহৎ পরিসরে তামাকের উৎপাদন অব্যাহত) ইত্যাদি কারনে মাদকের নেশা মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই, ইউএনও মো. আব্দুল জব্বারের এ অনবদ্য উদ্যোগ নিশ্চয়ই ফেরাতে পারে মাদকাসক্তদের মাদক থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে। সুস্থ, সুন্দর ও মানবিক জীবনে সত্যিকারের স্বস্থির আনতে সচেতনতার মতো দ্বিতীয় বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। তাই দৌলতপুর ইউএনও মো. আব্দুল জব্বারের এমন মহৎ উদ্যোগের সাথে সহমত পোষন করে মাদকমুক্ত দৌলতপুর গড়ার ক্ষেত্রে সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।