বিশেষ প্রতিনিধিঃ কোমলমতি শিশুদের মানসিক ও মনন বিকাশের জন্য সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। কিন্তু এর উল্টো চিত্র নেত্রকোণা পৌরসভার ৪৩ নং হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সরকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করে সুপেয় পানির নিশ্চিত করেছে। এ বিদ্যালয়েও এর ব্যতিক্রম নয়। নলকূপ থাকলেও দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ঠিক হচ্ছে না নলকূপ। নেই পানির ব্যবস্থা। এতে কোমলমতি শিশুরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আসছে বিদ্যালয়ে। এ যেন দেখার কেউ নেই। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দাবি সীমানা প্রচীর না থাকায় বিদ্যালয়ে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ঠিক টাক রাখা যাচ্ছে না কোন জিনিস পত্র।
সম্প্রতি ৪৩ নং হোসেনপুর সরকা বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে কয়েকটি নলকূপের চিহ্ন থাকলেও পানি উঠানোর মত সচল কোন নলকূপ নেই। শিক্ষার্থীদের পানি পিপাসা পেলে আশ পাশের লোকজনের বাড়িতে গিয়ে পানি পান করতে হয়। আবার শিক্ষকদের পানির প্রয়োজন হলে অন্যের বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহ করেন। তবুও নলকূপ মেরামতের নেই কোন উদ্যোগ। এছাড়াও জরুরী টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিপাকে পরেন শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরাও।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের পানির পিপাসা হলে পাশের বাড়িতে গিয়ে পান করে আসতে হয়। অনেক সময় ওই সমস্ত বাড়িতে গিয়ে লোকজন বেশি দেখে পানি না খেয়েই চলে আসি। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে টয়লেটে যেতে। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় বিপদে পড়তে হয়। মেডামকে (প্রধান শিক্ষক) অনেকবার বলেছি টিওবয়েলটা ঠিক করতে। টাকা নেই বলে সব সময় এড়িয়ে যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী রাজিব মিয়া, রুবেল ও পলিনসহ অনেকেই বলেন, এই প্রধান শিক্ষক আসার পর থেকে স্কুলে কোন শৃঙ্খলা নেই। প্রায় সময় দেখি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা জগ নিয়ে বিভিন্ন বাসায় পানি আনতে যায়। আবার টয়লেটের পানির ব্যবস্থা না থাকায় ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা কাপড় নষ্ট করে বাড়িতে চলে যায়। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই স্কুলের দিকে দৃষ্টি দেন।
হোসেনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জেমি, রোজিনা আক্তার, শাম্মী আক্তার, রাজীব সরকার, মাহমুদা হোসাইন ও মাহমুদা আক্তার বলেন, কয়েক মাস ধরে বিদ্যালয়ের নলকূপ নষ্ট হয়ে আছে। পানির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীসহ আমরা সবাই ভোগান্তির মধ্যে আছি। পানির প্রয়োজন হলে লোকজনের বাসা বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। আমরা চাই নলকূপ মেরামত অথবা স্থাপনের মাধ্যমে দ্রুত বিষয়টি সমাধান হোক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলেন, নলকূপের ব্যাপারে অনেকবার জনস্বাস্থ্য অফিসে কথা বলেছি। তারা বলেছে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা করে দিবেন। নলকূপ স্থাপনের ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য অফিসের কেউ তার সাথে যোগাযোগও করেননি স্কুলে কেউ আসেননি বলে দাবি করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক জানান, কয়েক মাস ধরে নলকূপ নষ্ট হয়ে আছে। এতে করে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী সহ শিক্ষকরাও চরম ভোগান্তির মধ্যে আছে। প্রধান শিক্ষককে বলেছিলাম নলকূপ মেরামত করে শিশুদের ভোগান্তির নিরসন করতে।
সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য অফিসের উপ সহকারি প্রকৌশলী আকাশ বসাক জানান, সদর উপজেলার প্রায় দুইশত বিদ্যালয়ে সাব মার্সিবল গভীর নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাব মার্সিবল গভীর স্থাফন করার জন্য আমার মেকানিক গিয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক নিবেন না বলে মেকানিকের সাথে বাক বিতন্ডা পর্যন্তও করেছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর বলেন, আপনাদের মাধ্যমে শুনেছি ৪৩ নং হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। আমি কথা বলবো উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সমাধানের বিষয়ে উদ্যোগ নিবে।