বাংলাদেশ এর সবচেয়ে ছোট ও অনগ্রসর জেলা গুলোর মধ্যে মাগুরা অন্যতম। এটি খুলনা বিভাগের একটি জেলা। অতীতে মাগুরা ছিল কুসংস্কার ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। আরও ছিল অবহেলিত ও অনগ্রসর। একুশ শতকে এসেও আধুনিক শিক্ষা-সভ্যতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত মাগুরা জেলা। এ জেলার মোট জনসংখ্যা ৯ লাখের বেশি। এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষার জন্য মাগুরায় যে কয়টি কলেজ রয়েছে এরমধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ব্যতীত বাকি সবগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও মাগুরায় কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। এ কারণে বিপুল জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষার চাহিদা মেটাতে জেলার শিক্ষার্থীদের যেতে হয় পার্শ্ববর্তী জেলা যশোর, খুলনা কিংবা রাজধানী ঢাকায়।
মাগুরা জেলা অতীতে ছিল যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত। মাগুরাকে ১৮৪৫ সালে যশোর জেলার প্রথম মহকুমা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নতি করা হয়। মাগুরার তিনগুণ জনসংখ্যা নিয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে শিক্ষা ও অর্থনীতিতে যশোর এগিয়ে থাকলেও একদম পিছিয়ে রয়েছে যশোর থেকে বিভক্ত হওয়া মাগুরা। তবে মাগুরা জেলার সমৃদ্ধ পরিচয়, এটি খুলনা বিভাগের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। কৃষি ও খাদ্যশস্য উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলা। জমিদারি আমল থেকে মাগুরার সংস্কৃতির ইতিহাস খুবই গৌরবোজ্জ্বল। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে ‘‘মাগুরা ললিত কলা বিদ্যাপীঠ’’ নামে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। অনগ্রসর এই জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে ১৯৪০ সালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় একটি সরকারি মেডিকলে কলেজ। এসব কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষার গ্রহণ করা গেলেও কোন প্রকার জরিপ, গবেষণা কিংবা উদ্ভাবন হয় না। যা অন্যতম লক্ষ্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর।
মাগুরার সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীর আগমন দরকার। রাজধানী ঢাকা থেকে মাগুরার দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। পদ্মা ব্রীজ হওয়ার কারণে সড়ক পথের যাতায়াত খুবই সহজ হয়েছে। তাই দেশের যেকোন স্থান থেকে দ্রুত সময়ে আসা যাওয়া করা যায়। শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ার কারণে তরুণদের প্রায় সকলে মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার ব্যবহারে অভ্যস্ত। এসব ডিভাইস সরাসির ভূমিকা রাখছে এই প্রজন্মের লেখাপড়া, যোগাযোগ, বিনোদন ও ক্যারিয়ারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তিগত শিক্ষার জোরদার করা হলে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি নির্ভর ক্যারিয়ার গঠনে উৎসাহিত হবে।
মাগুরা জেলার ব্র্যান্ডিং ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি পরিবেশগত উন্নয়তে ভূমিকা রাখে। আঞ্চলিক আচার আচরণেও পরিবর্তন আনে। সাধারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনার সংস্কার আনে। শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদানের সাথে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন করে যা পরিপূর্ণ ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা হওয়া গবেষণাগুলো সকলের জন্য উপকার বয়ে আনে।
কৃষি ও খাদ্যশস্য উৎপাদনে মাগুরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলা। তাই কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দরকার। এতে করে স্থানীয় ভাবে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও সকল পরিক্ষা-নিরিক্ষার সুফল পাবে জেলাবাসী। এতে তৈরি হবে কৃষি ও প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্যোক্তা। যা মাগুরার কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
২০১৬ সালের ২১শে জানুয়ারি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মদন মোহন কলেজের হীরকজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “উচ্চ শিক্ষার প্রসারে ও সুবিধার্থে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।” রাষ্ট্রপ্রধানের এই পরিকল্পনা ঘোষণার পর সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে এখনো মাগুরায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। এ জেলার উচ্চ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি।
লেখক: জেনিস ফারজানা তানিয়া, স্বত্বাধিকারী, আলিয়া’স কালেকশন।