প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্টের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন সংযোজন মেট্রোরেল। মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য আমরা স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তুলব।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় উত্তরার দিয়াবাড়ি মাঠে দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ যখন শুরু করি, তখনই হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় আমাদের মেট্রোরেলের পরামর্শক সাত জাপানি নাগরিক মারা যান। তারপরও জাপান সরকার পিছু হটেনি। তারা আমাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ। আমরা নিহতদের স্মরণে নামফলক রাখব। উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশনে তাদের নাম সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই দেশকে নিয়ে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলও। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হতে পারেনি। বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আসে। ওইদিন ঘাতকেরা আমার বাবা-মাসহ পরিবারের ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজ মেট্রোরেল করে বাংলাদেশের অহংকারের আরেকটি পালক মাথার মুকুটে সংযোজিত করলাম।
তিনি আরও বলেন, অনেক টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটা সংরক্ষণ করা, মান নিশ্চিত করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ব্যবহারকারীদের দায়িত্ব। ডিজিটাল ডিভাইস যেন নষ্ট না হয়, ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত্নবান হবেন। কেউ যেন আবর্জনা না ফেলে, খেয়াল রাখবেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২১ বছর পর সরকারে এসে আমরা এই দেশকে নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তার একটি নমুনা হলো মেট্রোরেল।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেলের উদ্বোধনের ফলে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে চারটি মাইলফলক ছুঁলো বাংলাদেশ। প্রথমত, মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করল। তৃতীয়ত, ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যান এটি, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি ধাপ। চতুর্থত, বাংলাদেশ দ্রুত গতি সম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করল। ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা রাজধানীকে যানজট মুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। তাই যানজট মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করব। এরমধ্যে ৬টি মেট্রোরেলের লাইনের কাজ শুরু করেছি যা ২০৩০ সালে শেষ হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে যারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি তারা যেন সহজে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য নির্দিষ্ট আসন বরাদ্দ রাখা হবে। নারীদের জন্য আলাদা কোর্স থাকবে এবং শিশুদের জন্য পরিচর্যা কেন্দ্র থাকবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা ফ্রি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেলের কারণে আমাদের দেশের লোকের কর্মসংস্থান ও কর্মক্ষমতা বাড়বে। জিডিপিতেও যথেষ্ট অবদান রাখবে।
এর আগে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে মেট্রোরেল উদ্বোধনে উত্তরার দিয়াবাড়িতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫নং সেক্টরের খেলার মাঠে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লা নুরী, মেট্রোরেল কোম্পানির এমডি এম এন সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।